শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৯ অপরাহ্ন

একের পর এক বিরাট কেলেঙ্কারি, স্বাস্থ্য খাতে আস্থা তলানিতে

একের পর এক বিরাট কেলেঙ্কারি, স্বাস্থ্য খাতে আস্থা তলানিতে

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্বাস্থ্য খাতে কিছু দুর্নীতির ঘটনা বেশ আলোচিত। এর মধ্যে পর্দা কেলেঙ্কারি এবং মেডিক্যালে ভর্তি জালিয়াতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ২০১৫ সালে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া নিয়ে চরম অসন্তোষ দেখা দিলেও কর্তৃপক্ষ তখন বলেছিল, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। এখন পাঁচ বছর পর গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেল তখন সত্যিই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল। তবে করোনাকালে কোভিড-১৯ সংক্রমণের মধ্যেই বেশ কিছু হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠানের অসৎ কর্মকাণ্ড সবার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। মহামারীর সময়ে এ খাতে উপর্যুপরি দুর্নীতি আর করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার নামে মাত্রাতিরিক্ত অর্থ আদায়, করোনার ভুয়া পরীক্ষা ও পজিটিভ-নেগেটিভ বাণিজ্য, উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা না পাওয়া, দিনের পর দিন লাইনে দাঁড়িয়েও পরীক্ষা করাতে না পারা, হাসপাতালের সামনে রাতভর বসে থেকে বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়া, পিপিই ও মাস্ক সরবরাহে জালিয়াতি, বেসরকারি হাসপাতালে ভুয়া ডাক্তারের ছড়াছড়ি প্রভৃতি কারণে স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থাহীনতা বর্তমানে চরমে পৌঁছেছে। ফলে বড় ধরনের আস্থা সঙ্কটে পড়েছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত। বলা চলে, এর অবস্থান এখন তলানিতে।
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দৃষ্টিকটু পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে। এ আস্থাহীনতার মধ্যে কিছু দিন আগে স্বাস্থ্য সচিবকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। ২১ জুলাই নানা কেলেঙ্কারি মাথায় নিয়েই স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি পদত্যাগ করেছেন। আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে অধিদফতরে নতুন ডিজি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি স্বাস্থ্যব্যবস্থা ঢেলে সাজিয়ে এ আস্থার সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারবেন কি না, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সন্দিহান। স্বাস্থ্য খাতের এখন যে অবস্থা, দুর্নীতি রোধ করে ঘুরে দাঁড়ানোই সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, স্বাস্থ্য খাত একটি শক্তিশালী চক্রের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে। এর সাথে সরকারের ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে। এখন দরকার দুষ্টচক্রের সাথে জড়িত ওই সব ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করা, তাদের অপসারণ করা। কিন্তু দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তাদের নাম ধামাচাপা দেয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকের ধারণা, যেসব দেশের অ্যাজেন্ট দেশে আছে; তারা আমাদের স্বাস্থ্যসেবার মান প্রশ্নবিদ্ধ করতে তৎপর, যাতে ‘উন্নত’ চিকিৎসার জন্য রোগীরা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে যেতে বাধ্য হন। একই সাথে বিদেশনির্ভর চিকিৎসাসেবাও স্বাস্থ্য খাতকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। যদি দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন করতে হয়, তা হলে সঙ্কট কাটিয়ে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সক্রিয় দুষ্টচক্র ভাঙতে হবে, এ খাতের অভ্যন্তরীণ যে সমস্যা আছে তা সমাধান করতে হবে, চিকিৎসাসেবা নিয়ে মানুষের যে প্রশ্ন রয়েছে, সেসব প্রশ্ন দূর করতে হবে।
আমরা মনে করি, দুর্নীতির জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজির পদত্যাগ একটি বার্তা। এখন যেটা করা উচিত, তা হলো নিম্নস্তরের কর্মচারী থেকে শুরু করে ওপর মহলের সব পর্যায়ে পরিবর্তন এনে স্বাস্থ্য খাত পুরো ঢেলে সাজানো। । যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে; তদন্তসাপেক্ষে তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া। কোনোভাবেই যেন রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কেউ পার পেয়ে না যায়। এটি সবার মনে রাখা দরকার, শক্ত হাতে দুর্নীতি দমন করা না গেলে দেশের স্বাস্থ্য খাত তছনছ হয়ে যাবে। এতে কিছু ধনীর সমস্যা না হলেও চিকিৎসা পেতে গণমানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না। তাতে অবস্থা এমন হতে পারে যে, দরিদ্র ও অতিদরিদ্র অনেকে বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে পারেন। তাই স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন সমস্যার তথ্য গোপন না করে খোলামেলা আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। স্বাস্থ্য খাত ঢেলে সাজিয়ে বিদ্যমান সমস্যাগুলো দূর করা গেলেই মানুষের মধ্যে যে আস্থার সঙ্কট দেখা দিয়েছে; তা কাটিয়ে ওঠা সহজ হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877